• শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]
Headline
ধূমপানমুক্ত সমাজ গঠনে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ: গোলশূন্য খেলায় দু’দলই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ-২০২৬ দেশী ও বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ আপডেট: বিশ্লেষণ ও নির্দেশিকা (২০২৫-২৬) আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রযুক্তির অপরিহার্যতা: একটি বিশ্লেষণ রংপুরে ৫৬ দিনব্যাপী শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু ২০ ডিসেম্বর: বাংলা ও গণিত শিক্ষকদের অগ্রাধিকার হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বিবর্তন বিশ্লেষণ প্রাচীন সমতটের জনপদ থেকে আধুনিক কুমিল্লা: একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ নীল সীমার শেষ আলো এই দুনিয়ায় আমি এসেছি একা রংপুরে ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর ও শিক্ষকদের মিলনমেলা: অতি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা বাস্তবায়নে  প্রযুক্তির ব্যবহারে গুরুত্বারোপ।
Notice
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একদুয়ারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মনোহরদী, নরসিংদী তে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি চলছে।           ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রংপুরে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি চলছে।

প্রাচীন সমতটের জনপদ থেকে আধুনিক কুমিল্লা: একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ

Reporter Name / ৬৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

প্রাচীন সমতটের জনপদ থেকে আধুনিক কুমিল্লা: একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষণ

আলোধারা ডেস্ক

 বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা কেবল একটি জেলা নয়, বরং হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক বিশাল ভান্ডার। প্রাচীনকালে ‘সমতট’ নামে পরিচিত এই জনপদ শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে যুগে যুগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চলটি বৌদ্ধ বিহার, মোঘল স্থাপত্য এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিতে সমৃদ্ধ।

প্রাচীন যুগ ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য কুমিল্লার ইতিহাসের প্রাচীনতম অধ্যায়টি খোদাই করা আছে ময়নামতি-লালমাই পাহাড়ি অঞ্চলে।

  • সমতট রাজ্য: সপ্তম শতাব্দীতে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর বর্ণনায় এই অঞ্চলটি ‘কিয়া-মল-ঙ্কিয়া’ (কমলাঙ্ক) বা সমতট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • বৌদ্ধ সভ্যতা: অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এখানে দেব ও চন্দ্র বংশীয় রাজারা রাজত্ব করেন। শালবন বিহার, আনন্দ বিহার এবং কুটিলা মুড়া এখানকার সমৃদ্ধ বৌদ্ধ সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে। এই অঞ্চলটি একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র ছিল।

মধ্যযুগ ও নামকরণ – ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হিসেবে দীর্ঘকাল শাসিত হওয়ার পর এই অঞ্চলটি মোঘলদের দখলে আসে।

  • নামকরণ: ‘কুমিল্লা’ নামের উৎপত্তি নিয়ে নানা মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন ‘কমলাঙ্ক’ (পদ্মফুলের দীঘি) শব্দ থেকে বিবর্তিত হয়ে কুমিল্লা হয়েছে। আবার কারো মতে, টিপরা ভাষার ‘কুনুমিয়া’ থেকে এই নামের উৎপত্তি।
  • ত্রিপুরা ফতোয়াবাদ: ১৭৩৩ সালে সুজাউদ্দিন খানের আমলে এই অঞ্চল ‘চাকলা রওশনাবাদ’ নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে ১৭৯০ সালে ব্রিটিশরা ‘ত্রিপুরা জেলা’ গঠন করে, যা ১৯৬০ সালে কুমিল্লা জেলা নামে নামকরণ করা হয়।

ব্রিটিশ আমল ও শিক্ষা-সংস্কৃতি – ব্রিটিশ শাসনামলে কুমিল্লা শিক্ষা ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে ব্যাপক উন্নতি লাভ করে।

  • ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর: কুমিল্লাকে একসময় ‘ব্যাংক ও ট্যাংকের’ (পুকুর) শহর বলা হতো। ত্রিপুরার রাজাদের খনন করা ‘ধর্মসাগর’ আজও শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
  • শিক্ষার প্রসার: ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুমিল্লা শিক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়।
  • ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন: ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতি এবং মহাত্মা গান্ধীর আগমন কুমিল্লার রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩১ সালে চৌদ্দগ্রামের মোহিনী গ্রামের দুই কিশোরী শান্তি ও সুনীতি ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।

ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ – বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাঁক পরিবর্তনে কুমিল্লার অবদান অপরিসীম।

  • ভাষা আন্দোলন: ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই (কুমিল্লার সন্তান) প্রথম উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। এই সাহসী পদক্ষেপই ভাষা আন্দোলনের বীজ বপন করেছিল।
  • মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১): ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কসবা ও সালদা নদীতে তুমুল যুদ্ধ হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুমিল্লা সেনানিবাসে এবং ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির কাছে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা হানাদার মুক্ত হয়।

গ্রামীণ উন্নয়ন ও আধুনিক কুমিল্লা – আধুনিক কুমিল্লার পরিচিতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মূলত ‘বার্ড’ (BARD)- এর কারণে।

  • কুমিল্লা মডেল: ড. আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’ (BARD) ষাটের দশকে সমবায় ও গ্রামীণ উন্নয়নের যে মডেল তৈরি করে, তা বিশ্বব্যাপী ‘কুমিল্লা মডেল’ নামে পরিচিত।
  • সাহিত্য ও সংস্কৃতি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কুমিল্লায় অতিবাহিত করেন এবং এখানেই তিনি নার্গিস ও প্রমিলা দেবীর সান্নিধ্য পান। তাঁর অনেক কালজয়ী সৃষ্টি কুমিল্লায় রচিত।

অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য – কুমিল্লার খাদি বা খদ্দর শিল্প এবং সুস্বাদু রসমালাই আজ বাংলাদেশের ঐতিহ্যের  অংশ। তাঁত শিল্প এবং মৃৎশিল্পেও এই জেলার রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা।

প্রাচীন শালবন বিহারের পোড়ামাটি থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের রণাঙ্গন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই কুমিল্লার মাটি ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। শিক্ষা, সাহিত্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতির পথিকৃৎ হিসেবে কুমিল্লা বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category

অভিনন্দন! দ্যা রয়েল কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জন করার জন্য